বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের দর নিয়ে অসন্তোষ, অস্থির পেঁয়াজের পাইকারী বাজার
বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থির রাখা যাচ্ছে না। একরকম অসন্তোষ নিয়ে নতুন আরেকটি বছর শুরু করেছেন উৎপাদক, আমদানিকারক, সরবরাহকারী এবং ভোক্তা সাধারণ।
শীতকালীন সবজি উৎপাদনের এ ভরা মৌসুমে বাজারে এসেছে নানা প্রকার সবজি। দামের ব্যাপারে ভোক্তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এলেও উৎপাদক কৃষক হতাশ। তারা তাদের উৎপাদন মূল্য পাচ্ছে না।
এদিকে, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের ১ লিটারের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। গত পাঁচ মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২২ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। বাজারে চিনির দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
তবে, চালের বাজারে কোনো হেরফের নেই। মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বলছেন, চালের দাম নতুন করে বাড়েনি। আবার কমেওনি।
রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল খুচরা বাজারে সরু মিনিকেট চাল ৬৫-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, ভালো মানের বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহ না করার জন্য মিল মালিকরা তাদের অপারগতার কথা জানিয়েছে। তবে যারা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি করেছেন রংপুর জেলা জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম হক্কানী। মিল মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারকে চাল আমদানি করেই গুদাম ভরতে হবে।
এ অবস্থায় চালের বাজারে সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় সরকার গতকাল (৭ জানুয়ারি) চাল আমদানিতে শুল্ক-কর ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা কার্যকর থাকবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে। শুল্ক সুবিধার আওতায় অনুমতি সাপেক্ষে চাল আমদানি করা যাবে।
ওদিকে অস্থির হয়ে রয়েছে পেঁয়াজের পাইকারী বাজার। গতকাল পেঁয়াজ আমদানিতেও ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক নতুন করে আরোপ করা হয়েছে। আর স্থগিত থাকা ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এর আগে ভারত ১ জানুয়ারি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসে। রাজধানীর তিনটি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজের বাজারমূল্য ছিল প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।
তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে অসন্তুষ্ট আমদানিকারক ও আড়তদাররা। পেঁয়াজের মৌসূমে দেশীয় পেঁয়াজের দাম না পেয়ে কৃষক হতাশ। আর ব্যবসায়ীদের গুদামে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও ভারতীয় পেঁয়াজের নতুন আমদানিতে তারাও হতাশ
এর আগে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে ঢাকাসহ দেশের সব বাজারে বাড়তে থাকে এই নিত্যপণ্যের দাম। সে সময় অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি সহজ করতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক তুলে নেয়া হয়েছিল। এবার তা পুনরায় কার্যকর করা হল।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।